বিটের উপকারিতা ও অপকারিতা
বিট, বিট রুট, বিট ফল যে নামেই বলি না কেন সব কিন্তু এক ই। আজকে আসুন আমরা এই বিট ফল বা বিট রুট নিয়ে আলোচনা করি। এই ফলের কেন এত নাম ডাক শোনা যাচ্ছে আজকাল? কি উপকার? খেলে কোন সমস্যা আছে কি না। এসব নিয়েই মুলত আজকের আলোচনা করব। আজকের আরটিক্যাল টি লেখার আরেকটি উদ্যেশ্য হল আমার নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা। আমি নিজেও নিয়মিত বিট রুট খাই। আর যখন ই পাই তখনি সংগ্রহ করে থাকি। এটা মুলা বা গাজরের মত মাটির নিচেই হয় তাই এতে প্রচুর খনিজ উপাদান রয়েছে। আর কালার টা কি? আহ! অসাধারণ। চলুন আজকে বিট রুট নিয়ে একটু বিস্তারিত জানার চেস্টা করি।
সূচিপত্র
বিটের উপকারিতা ও অপকারিতা
বিট ফল এর উপকারিতা
১। শরীরে শক্তি বাড়াতে বিট এর ভুমিকা অপরিসিম
২। পুষ্টিবিদ দের মতে বিট এ ক্যন্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ও রয়েছে। বিট শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।
৩। বিটে প্রচুর পরিমাণে আয়রন বিদ্যমান এবং মানবদেহে রক্তসল্পতা দূর করতে এটা খুবই কার্যকরী।
৪। বিট খেলে মানব দেশে অক্সিজেনের কার্যকারিতা বেড়ে যায়। যার কারনে আমাদের কাজ করার ক্ষমতা কে বাড়িয়ে তোলে।
৫। এতে আছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা কিনা শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং রক্তে খতিকারক কোলেস্টরল বেড়ে যাওয়া থেক্বে প্রতিহত করতে সাহায্য করে।
বিট ফল এর অপকারিতা
১। বিট বেশি খেলে ‘বিটুরিয়া’ হতে পারে যেটি হলে প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন হয়ে গোলাপী বর্ণ ধারণ করে। এটি হয়ত মারাত্বক কিছু নয় তবে চিন্তার কারন হতে পারে।
২। বিট এ অক্সালেট বেশি থাকে, তাই অতিরিক্ত গ্রহণ করলে কিডনী তে পাথর হবার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
৩। কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এলারজির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাতে চুলকানি, ঠান্ডা লাগা এবং জ্বর হতে পারে।
৪। বিট গ্রহণ করলে কারো কারো পেট খারাপ হতে পারে।
৫। বিট রক্তচাপ কমাতে সাহয্য করে তাই যাদের এম্নিতেই রক্তচাপ কম তাদের উচিত বিটরুট না খাওয়া।
৬। গর্ভাবস্থায় বিটরুট খেলে মাথা ঘোরা ও ক্লান্তি ভাব বেড়ে যেতে পারে।
৭। বিট এ বিদ্যমান অক্সালেট শরীরে ক্যালসিয়ান শোষণে বাধা দান করে।
বিটরুটের রসের পুষ্টিগুণ
বিটরুটের রসে প্রচুর পরিমাণে খনিজ ও পুষ্টি উপাদান রয়েছে।
পুষ্টি উপাদান মান/ প্রতি ১০০ মিলি
শক্তি ৩৮ কিলোক্যালরি
কার্বোহাইড্রেট ৮.৭৫ গ্রাম
চিনি ৮.৭৫ গ্রাম
প্রোটিন ০.৪২ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ১৭ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম ২৪২ মিলিগ্রাম
আয়রন ০.৭৫ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম ৫৪ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ১৭ মিলিগ্রাম
ফোলেট ৩০ মাইক্রো গ্রাম
ভিটামিন সি ২.৫ মিলিগ্রাম
বিট এর আরো কিছু গুনাগুণ
ত্বকের সুরক্ষায়: ত্বকের সুরক্ষার জন্য অনেক ধরণের উপাদান কিন্তু এই বিট এ রয়েছে। ত্বকের সজীবতা ধরে রাখতে নিয়মিত বিট খাওয়া যেতে পারে। বিট ত্বকে অতিরিক্ত তৈলাক্তটা দূর করতে সহায়তা করে। শরীরের প্রদাহ দূর করে তাই এটি ব্যাবহারে ত্বকের ব্রণ থেকে ও মুক্তি পাওয়া যায়।
শরীর আর্দ্র রাখে: শীতের সময় ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যাওয়ার যে একটি ব্যাপার রয়েছে সেটা থেকে রেহাই পেতে কিন্তু আপনি বিট খেতে পারেন এবং সাথে প্রচুর পানি পান করতে হবে। বিট শরীরে আদ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে।
বিট কি কাঁচা খাওয়া যায়
অবশ্যই বিট কাঁচা খাওয়া যায়। বরং কাঁচা খেলেই পুস্টিগুণ বেশি পাওয়া যায়। টমেটো, গাঁজর কিংবা শসা আমরা যেভাবে কাঁচা খাই বিট ও সেভাবে কাঁচা খাওয়া যায়। আপনি সালাদ হিসেবে খেতে পারেন। লাচা বিট কে কল্ডপ্রেসড জুসার দিয়ে জুস বানিয়েও খেতে পারেন।
সতর্কতা
বিট প্রহণ করার আগে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। কারন অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে এটা শরীরের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়াও এলারজির সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। শিশুদের খেত্রেও এটা ঘটতে পারে। যাদের পেটের হজমের সমস্যা রয়েছে তাদের বিট রুট না খাওয়াই ভাল।
বিট ফল কোথায় পাওয়া যায়
আপনি আপনার নিকটস্থ সুপার সুপার শপে কিংবা কাঁচা বাজারেই বিট ফল পেয়ে যাবেন। আজকাল প্রচুর বিট বাংলাদেশে উৎপাদন করা হচ্ছে। হয়ত অন্য সবজি বা ফলের এর মত এত অধিক আকারে এখনো পাবেন না কিন্তু পাবেন। একটু খোজ করে দেখলেই পাবেন। আমি নিয়মিতই পেয়ে থাকি এবং কিনে থাকি।
বিট রুটের দাম
বিট রুটের দাম ১০০ থেকে ২০০টাকা কেজি ও হতে পারে। তবে অবাক করার বিষয় হল যে আমি খুলনা ইউনিভার্সিটির পাশের বাঁজারে মাত্র ২০টাকা কেজি দরে পেয়ে গেছি। কি আর করি বলুন একেবারে ৫ কেজি কিনে নিলাম!
বিট ফল কিভাবে খায়
বিট ফল তো অনেক ভাবেই খাওয়া যায়। তবে আপনাদের সাথে আমি এখন শেয়ার করব আমি কি কি ভাবে খাই।
১। জুস বানিয়ে – আমি জুস বানিয়ে খাই। তবে প্রচলিত ব্লেন্ডারে নয় বরং কোল্ড প্রেসড জুসারে করে জুস বানাই। তাতে এক দিক দিয়ে ছোবড়া বের ঘয়ে যায় আরেক দিক দিয়ে জুস বের হয়।
২। সালাদ হিসেবে – বিট ফল আসলে কাঁচা খেলেই বেশি উপকার। তাইলে শসা এর মত কুচি কুচি করে কেটে সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়, এবং আমিও এভাবে খাই।
৩। ভাজি হিসেবে – এক্সট্রা ভারজিন অলিভ অয়েল দিয়ে সাথে একটু মরিচ রসুন দিয়ে বিট ফল ভেজে খাই আমি। দাড়ুন স্বাদ, মিস্টি মিস্টি একটা স্বাদ অনুভূত হয়। আপনারাও এভাবে ট্রাই করে দেখতে পারেন।
৪। পাওডার এর জুস – ব্যাজারে বিট রুট পাওডার পওয়া যায়। পাওডার জাস্ট পানিতে গুলে নিয়ে শরবত বানিয়ে খাওয়া যায়। আমি যদিও এভাবে খাই না। কারন অথেনটিক সোর্স থেকে বিট পাওডার সংগ্রহ না হলে সমস্যা।
উপসংহার
বিট রুটের তো অনেক উপকারের কথা জানলাম। কিন্তু সাবধানতার কথা ও ভুলে গেলে কিন্তু চলবে না। অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে তারপরে খাওয়ার পরিকল্পনা করা যেতে পারে। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে যে, যে কোন কিছুই অতিরিক্ত কিন্তু ভাল নয়। সব কিছুর ই একটি নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনি চিয়া সিড খান, কিংবা বেশি খনিজ উপাদানের জন্য হিমালয়ান পিংক সল্ট খান, কিংবা সুপার ফুড হিসেবে সজিনা পাতা খান না কেন, কোন কিছুই কিন্তু অতিরিক্ত ভাল নয়। তাই ডাক্তার কিংবা পুষ্টিবিদের পরামর্শ আমাদের নেয়া উচিত। আমাদের ডিসক্লেমার পেজ টি পড়ে দেখার অনুরোধ রইল।
রেফারেন্সঃ
১। pharmeas
২। jaijaidinbd
৩। prothomalo